পশ্চিমবঙ্গে ২০২৫ সালের দুর্গাপুজো করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে এক লক্ষ দশ হাজার টাকা করে দিচ্ছে সেটা কিভাবে পাবো ?
পশ্চিমবঙ্গে ২০২৫ সালের দুর্গাপুজো করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর অনুদান: কিভাবে পাবেন ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা?
দুর্গাপুজো বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব। এই উৎসবকে আরও জাঁকজমকপূর্ণ করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রতি বছর বিভিন্ন পুজো কমিটিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। ২০২৫ সালের দুর্গাপুজোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। এই টাকা কিভাবে পাবেন, আবেদনের প্রক্রিয়া কী, এবং কারা এই সুবিধা পাবেন—সেই সমস্ত তথ্য এই নিবন্ধে আলোচনা করা হবে।
১. কারা এই অনুদান পাবেন?
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই উদ্যোগ মূলত স্থানীয় দুর্গাপুজো কমিটি, বারোয়ারি পুজো, এবং স্বল্প আয়ের পারিবারিক পুজোগুলিকে সহায়তা করার জন্য। নিচের শর্তগুলি পূরণ করলে আপনি এই অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন:
বারোয়ারি বা কমিউনিটি পুজো কমিটি হতে হবে (যেখানে স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণ থাকে)।
নিবন্ধিত পুজো কমিটি হতে হবে (স্থানীয় পুরসভা বা পঞ্চায়েতের অনুমোদন থাকতে হবে)।
পূর্ববর্তী বছরগুলিতে সরকারি নিয়ম মেনে পুজো করা হয়েছে এমন কমিটিগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়াই ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে।
নোট: কিছু ক্ষেত্রে নতুন পুজো কমিটিও আবেদন করতে পারবে, তবে স্থানীয় প্রশাসনের সুপারিশ প্রয়োজন হতে পারে।
২. কিভাবে আবেদন করবেন?
২০২৫ সালের দুর্গাপুজোর জন্য অনুদান পেতে আপনাকে একটি অনলাইন বা অফলাইন আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। নিচে ধাপে ধাপে পদ্ধতি দেওয়া হলো:
ধাপ ১: আবেদন ফর্ম সংগ্রহ
অনলাইন পদ্ধতি: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আনন্দবাজার পোর্টাল বা জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম ডাউনলোড করুন।
অফলাইন পদ্ধতি: স্থানীয় ব্লক উন্নয়ন দফতর (BDO), পুরসভা অফিস বা পঞ্চায়েত থেকে ফর্ম সংগ্রহ করুন।
ধাপ ২: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন
আবেদন ফর্মের সাথে নিচের ডকুমেন্টস সংযুক্ত করতে হবে:
পুজো কমিটির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (স্থানীয় কর্তৃপক্ষ থেকে)।
কমিটির সদস্যদের তালিকা ও পরিচয়পত্র (আধার কার্ড/ভোটার আইডি)।
পূর্ববর্তী বছরের পুজোর ছবি (যদি থাকে)।
ব্যাংক পাসবুকের কপি (কমিটির নামে অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে)।
স্থানীয় কাউন্সিলর/পঞ্চায়েত প্রধানের সুপারিশপত্র (যদি প্রয়োজন হয়)।
ধাপ ৩: আবেদন জমা দেওয়া
অনলাইনে: সরকারি ওয়েবসাইটে লগ ইন করে ফর্ম আপলোড করুন।
অফলাইনে: সংশ্লিষ্ট জেলা বা ব্লক অফিসে জমা দিন।
ধাপ ৪: যাচাইকরণ ও অনুমোদন
স্থানীয় প্রশাসন কমিটির তথ্য যাচাই করবে।
যোগ্য কমিটিগুলির তালিকা সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
অনুমোদিত কমিটিগুলির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানো হবে।
৩. টাকা পাওয়ার সময়সীমা
সাধারণত, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যে (পুজোর আগে) এই অনুদান দেওয়া হয়। তবে আবেদন করার শেষ তারিখ জুলাই-আগস্ট ২০২৫ হতে পারে, তাই দেরি না করে সময়মতো আবেদন করুন।
৪. গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সতর্কতা
একটি পুজো কমিটি শুধুমাত্র একবারই অনুদান পাবে (একাধিক আবেদন করলে বাতিল হতে পারে)।
টাকা শুধুমাত্র পুজোর কাজে ব্যয় করতে হবে (যেমন: প্রতিমা, প্যান্ডাল, আলোকসজ্জা, নিরাপত্তা ইত্যাদি)।
কোনো ধরনের জালিয়াতি বা ভুল তথ্য দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
টাকা পেতে কোনো এজেন্ট বা দালালের উপর ভরসা করবেন না, সরাসরি সরকারি ওয়েবসাইট বা অফিস থেকে তথ্য নিন।
৫. সহায়তার জন্য হেল্পলাইন
যদি আবেদন করতে সমস্যা হয়, তাহলে নিচের নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন:
টোল ফ্রি হেল্পলাইন: ১৮০০-৩৪৫-২৪৫৬
ইমেইল: durgapujahelp@wb.gov.in
জেলা প্রশাসনের অফিস: আপনার এলাকার BDO বা DM অফিসে যোগাযোগ করুন।
৬. সরকারের এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো:
স্থানীয় শিল্প ও শিল্পীদের সহায়তা করা (প্রতিমা শিল্পী, কারিগর, মালি, শ্রমিক ইত্যাদি)।
ছোট পুজো কমিটিগুলিকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করা যাতে তারা সুন্দরভাবে পুজো আয়োজন করতে পারে।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করা এবং বাঙালির ধর্মীয় উৎসবকে আরও বৃহত্তরভাবে পালন করা।
৭. শেষ কথা
২০২৫ সালের দুর্গাপুজোয় সরকারের এই অনুদান অনেক পুজো কমিটির জন্য একটি বড় সহায়তা হতে চলেছে। যদি আপনার এলাকার পুজো কমিটি এই সুবিধা নিতে চায়, তবে সময়মতো আবেদন করুন এবং সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে চলুন।
মা দুর্গা সকলের মঙ্গল করুন, শুভ দুর্গোৎসব!
লেখক: [Surojit]
তথ্যসূত্র: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আনন্দবাজার পোর্টাল, জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি।
(এই নিবন্ধে প্রদত্ত তথ্য ২০২৪ সালের হিসাবে প্রযোজ্য, সরকারি নিয়ম পরিবর্তন হতে পারে, তাই সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি দেখুন।)

Post a Comment